Home / 2nd Success History
Line
Page_right
 
Download -
Success history about -
Population & Mother-child Care -
in Bangla format.
Text format
531 KB,   PDF file
Image format
2.07 MB,   PDF file
 

বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় এশিয়ায় পঞ্চম ও বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১০১৫ জন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছর বা এর কম সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। বর্ধিত এই জনসংখ্যা দেশের আবাদযোগ্য কৃষি জমি, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের উপর যে প্রভাব ফেলছে তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বড় বাঁধা হয়ে দড়িয়েছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার কে আরও নিম্নমুখি রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ১৯৫৩ সালে বেসরকারীভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শুরু হয়। কর্মসূচীর গুরত্ব অনুধাবন পূর্বক ১৯৬৫ সালে সরকার কর্মসূচীকে অধিগ্রহণ করে এবং সীমিত আকারে ক্লিনিক ভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরম্ভ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সকল সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরত্ব প্রদান করে এবং কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সর্বাত্বক প্রয়াস চালায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা উপলব্ধিকরে ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছিলেন,

“একটা কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে, প্রত্যেক বৎসর আমাদের ১৮ থেকে ২০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হল ৫০ হাজার বর্গ মাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে তাহলে ২৫/৩০ বৎসরে বাংলার কোন জমি থাকবে না হাল চাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সে জন্য আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে”।

তৎকালিন সরকার এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস কল্পে সরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আর্থ সামাজিক প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অগ্রগতি বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করে। জনমিতিক সূচকসমূহ এর যথার্থতা প্রকাশ করে। ২০১১ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ্ সার্ভে (বিডিএইচএস-২০১১) প্রতিবেদনে দেখা যায় এদেশের মোট প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার সত্তর দশকে ৬.৩ থেকে বর্তমানে হ্রাস পেয়ে ২.৩ এ দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.০% থেকে বর্তমানে ১.৩৭ তে নেমে এসেছে। একইসাথে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ৭.৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬১.২ তে উন্নীত হয়েছে। অপরদিকে এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) সত্তর দশকে ১৫০ থেকে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ৫২ এবং মাতৃমৃত্যু হার ১৯৮২ সালের ৬.২ থেকে ২০১০ সালে ১.৯৪ তে নেমে এসেছে।

   

আশির দশকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জনসংখ্যা কার্যক্রমের ত্বরিত সাফল্যের প্রত্যাশায় এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক বিবেচনা করে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের পাশাপাশি সারাদেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে মাতৃ-শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত করে। তবে ধারাবাহিক অগ্রগতি সমীক্ষায় কখনো কখনো অগ্রগতির শ্লথ গতি থাকলেও বিগত সাড়ে চার বছরে জনসংখ্যা ও মাতৃ-শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লক্ষ্য করা যায়।

   

সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি)- ৪ ও ৫ অর্জনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর গৃহীত কার্যক্রমসমূহ :
২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নির্ধারণ করা হয়। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ ঘোষণা নামে পরিচিত এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত ১৮৯ টি দেশ ও অন্ততঃ ২৩ টি আর্ন্তজাতিক সংস্থা ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

লক্ষ্যসমূহ হলো :
  • দারিদ্র দূরীকরণ ;
  • সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ;
  • জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন ;
  • শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ;
  • মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ;
  • এইচআইভি / এইডস, ম্যালেরিয়া ও যক্ষা রোগের সংক্রমণ রোধ ;
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ;
  • উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারত্বের সুযোগ সৃষ্টি ।
এই ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে ০৪ এবং ০৫ সরাসরি মাতৃ শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন সম্পর্কিত বিধায় এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উপরোক্ত দুটি লক্ষ্য (এমডিজি ৪ ও ৫) অর্জনে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে এবং ইতোমধ্যেই তা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এই সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা ৪ ও ৫ অর্জনে অর্থাৎ শিশুমৃত্যু হ্রাস ও মাতৃ স্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তা আলোচনার পূর্বে এমডিজি ৪ ও ৫ সংশ্লিষ্ট সূচকসমূহ ও এদের বর্তমান অবস্থা উপস্থাপন করা হলো -

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৪, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস :
সূচক ভিত্তি বছর বর্তমান অবস্থা লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫
৪.১: ০৫ বছরের নিচে শিশুমৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৬৫
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৫৩
(বিডিএইচএস-২০১১)
৪৮
৪.২: শিশুমৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৫২
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৪৩
(বিডিএইচএস-২০১১)
৩১
৪.৩: নবজাতকের মৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৩৭
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৩২
(বিডিএইচএস-২০১১)
২১

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতি :
সূচক ভিত্তি বছর বর্তমান অবস্থা লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫এ : ১৯৯০-২০১৫ এর মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার তিন-চতুর্থাংশ হ্রাসকরণ
মাতৃমৃত্যুর হার
(প্রতি লক্ষ জীবিত জন্মে)
৩২০ ১৯৪
(বিএমএসএস-২০১০)
১৪৩
দক্ষ স্বাস্থ্য পেশাজীবির বিপরীতে প্রসব সহায়তা কারীর অনুপাত ২৮.৮
(বিডিএইচএস-২০১১)
৫০
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫ বি : ২০১৫ সালের মধ্যে প্রজনন কালীন স্বাস্থ্যসেবার সর্বজনীন প্রবেশাধিকার অর্জন
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার (সিপিআর) % ৫৬
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৬১.২
(বিডিএইচএস-২০১১)
৭২
প্রসব পূর্ববর্তী সেবা (কমপক্ষে ১ বার) % ২৭.৫ (১৯৯৩) ৪৭.৭
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
প্রসব পূর্ববর্তী সেবা (কমপক্ষে ৪ বার) % ৫.৫ (১৯৯৩) ২৬
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
কৈশোরে মাতৃত্ব
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
১২১
(বিডিএইচএস-২০০৭)
১১৮
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদার হার (%) ১৭.৬
(বিডিএইচএস-২০০৭)
১৩.৫
(বিডিএইচএস-২০১১)


বিগত ৫ বছরে (২০০৯-২০১৩ ) অর্জিত সাফল্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম:
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১৯৭৫ সাল থেকে পরিবার পরিকল্পনার পাশাপাশি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত পরিবার পরিকল্পনার সেবা কেন্দ্র সমূহের মাধ্যমে গর্ভকালীন সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবা, জরুরী প্রসব সেবা, গর্ভোত্তর সেবা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, বয়:সন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা যৌনবাহিত রোগের সেবা, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা সহ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা দেওয়া হয়।

নিম্নবর্ণিত সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সেবা প্রদান করে আসছে-

মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার
(এমএফএসটিসি)
  আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
(এমসিএইচটিআই)
 
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন   পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন
  • জাতীয় পর্যায় আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, দুটি মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন দুটি মডেল ক্লিনিক;
  • জেলা পর্যায়- মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ( ৯৬টি এর মধ্যে ৭০ টি কেন্দ্র জরুরী প্রসূতি সেবা দেয়া হয়);
  • উপজেলা পর্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমসিএইচ- এফপি ইউনিট (৪২৭টি) মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১২টি;
  • ইউনিয়ন পর্যায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩৮৬০টি, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র-২৪টি;
  • কমিউনিটি পর্যায়ে প্রতিমাসে সারা দেশে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত নিম্নেবর্ণিত কার্যক্রমসমূহ শিশুমৃত্যু হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে-
  • এ পর্যন্ত ৩২৩ জন চিকিৎসক ও ৫৪৬ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (FWV) কে জরুরী প্রসূতি সেবা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
  • এ পর্যন্ত ১৫৫৭ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (FWV) মিডওয়াইফারী প্রশিক্ষণ শেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিরাপদ ও স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করছেন।
  • অদ্যাবধি ৭৬৯০ জন পরিবার কল্যাণ সহকারী (FWA) ও স্বাস্থ্য সহকারী (HA) কমিউনিটি ভিত্তিক স্কিলড্ বার্থ এ্যাটেনডেন্ট (CSBA) প্রশিক্ষণ শেষ করে কমিউনিটি পর্যায় গর্ভকালীন সেবা স্বাভাবিক প্রসব সেবা, প্রসব পরবর্তী সেবা সহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে আসছেন।
  • বিগত ৫ বছরে ৮৩৯ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ১৮ মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছেন।
  • বিগত ৫ বছরে জাতীয় পর্যায় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল এমএফএসটিসি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা চালু করা হয়েছে।
  • ৭০টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক জরুরী প্রসূতিসেবা দেয়া হচ্ছে।
  • ১১০৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক নিরাপদ প্রসব সেবা দেয়া হচ্ছে।
  • বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ চালু করা হয়েছে। নতুন নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হচ্ছে যেখান থেকে অতি সহজেই মা ও শিশু সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
  • নিরবচ্ছিন্ন লজিষ্টিকস সরবরাহ সেবা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বিগত ৫ বছরে সরবরাহের কোন অপ্রতুলতা লক্ষ্য করা যায়নি।
  • সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অধিদপ্তরের সকল ইউনিটে ল্যান সহ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ, সকল বিভাগ জেলা ও উপজেলায় মডেম এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে।
  • বিভাগ, জেলা, উপজেলার পাশাপাশি নির্বাচিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ১৩০০ ল্যাপটপ সরবরাহ প্রক্রিয়াধীন। ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪৪০ জন কর্মচারীকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট দেয়া হয়েছে।
 
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন   পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন

যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সেবা প্রদানের যাবতীয় ব্যবস্থা থাকা সত্বেও চাহিদা সৃষ্টির জন্য যথাযথ কার্যক্রমের অনুপস্থিতিতে সে কার্যক্রম বেশিদূর এগোতে পারেনা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিট জনসংখ্যা কার্যক্রম, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও মাতস্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রমে চাহিদা সৃষ্টিতে এই ইউনিটের জন্মলগ্ন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে।

সচেতনতা কার্যক্রমে তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ (আইইএম) ইউনিট এর ভুমিকা :
নিম্ন স্বাক্ষরতার হার এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সূচকের নিম্ন অবস্থা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি একটি সফল কর্মসূচি। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে মোট প্রজনন হার হ্রাস এর সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ধারাবাহিক রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সৃজনশীল কার্যক্রম গ্রহণ, সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রমের সমন্বয়, শক্তিশালী তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ কার্যক্রম এবং মাঠ প্রশাসনের সূদৃঢ় অঙ্গীকারের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম বিগত চার দশক ধরে এ দেশে অত্যন্ত সফল বলে প্রমানিত। গৃহীত যোগাযোগ কার্যক্রমের ফলে জন্মনিরোধক ব্যবহারের হার ও ছোট পরিবার গঠনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। মোট প্রজনন হার, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার, শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা কমেছে। তাছাড়া নিরাপদ মাতৃত্ব, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো, নবজাতকের যত্ন, বয়ঃসন্ধিকালীন যত্ন, লিঙ্গ সমতা, সর্বজনিন টীকাদান ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

সূচনালগ্ন হতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন আইইএম ইউনিট তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক এ কার্যক্রম সারাদেশে পরিচালিত হচ্ছে। পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের মাধ্যমে পরিচালিত আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ কার্যক্রমের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকেও সমান গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা হয়েছে। সত্তরের এর দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশ বেতারে এবং আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে পৃথক জনসংখ্যা সেল খোলা হয়েছে। আইইএম ইউনিটের অর্থায়নে তখন থেকেই বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা ও এইচআইভি/এইডস এসকল বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার (ঢাকা ও অন্য ১১টি উপকেন্দ্র) প্রতিদিন ৩৬০ মিনিট প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে। একই বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন ২৫ মিনিটের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

 
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন   পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন

বাংলাদেশ বেতারের জনসংখ্যা সেল পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে তার মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান, সাক্ষাৎকার, সরাসরি ফোন ইন অনুষ্ঠান, উদ্বুদ্ধকরণমূলক গান, ডকুমেন্টরী ইভেন্টস, ছোট গল্প ও জিংগেল অন্যতম। বাংলাদেশ টেলিভিশন যে সকল অনুষ্ঠান প্রচার করে তার মধ্যে সিনেমা স্লাইড, টিভি-স্পট, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টক-শো, নাটক, সিরিয়াল, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও মিউজিক ভিডিও অন্যতম।

আইইএম ইউনিটের প্রধান প্রধান কার্যক্রম :
  • উদ্বুদ্ধকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মননশীলতার জাগরণ;
  • দক্ষতা উন্নয়ন ও লজিষ্টিকস্ সহায়তা;
  • তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ বিষয়ক সামগ্রী তৈরী, বিতরণ ও প্রদর্শন;
  • তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ বিষয়ক কার্যক্রম পরিদর্শন, মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা;
  • গণ-মাধ্যমের জন্য যোগাযোগ উপকরণ প্রস্তুত ও সম্প্রচার।
স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আইইসি অপারেশনাল প্ল্যানের অন্তর্গত কার্যক্রমের আওতায় আইইএম ইউনিট কর্তৃক সরকারি কার্যক্রম ছাড়াও ইউএনএফপিএ, বিকেএমআই / ইউএসএআইডি এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইউ এস এ-র সাথে যৌথভাবেও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছ।

 
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন   পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন

পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যক্রমসমূহ :
  • স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি, বিলম্বে বিবাহ, নবজাতকের যত্ন, মায়ের দুধ খাওয়ানো ইত্যাদি বিষয়ে দেশব্যাপী প্রচারণা।
  • নব বিবাহিত ও কম সন্তান বিশিষ্ট দম্পতিদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব এবং জন্মবিরতিকরণ বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠান।
  • ম্যারেজ রেজিস্ট্রার, ধর্মীয় নেতা, স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ মাতৃত্ব ও বিলম্বে বিবাহ বিষয়ে ওরিয়েন্টশন সভার আয়োজন।
  • সেবা প্রদানকারীদের জন্য আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার আয়োজন।
  • পোস্টার, লিফলেট, পুস্তিকা, ব্রোশিউর ও ফ্লিপচার্ট এসকল উপাদান তৈরী ও বিতরণ।
  • বিলবোর্ড ও হোর্ডিং প্রদর্শন।
  • সারা দেশব্যাপি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৬টি জোনে বিভক্ত করে অডিও-ভিজুয়াল ভ্যানের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে, বস্তি ও দূর্গম এলাকায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
  • স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টরী সিনেমা, টিভি নাটক, টিভি স্পট, টিভি ম্যাগাজিন ও পথ নাটক তৈরী, সম্প্রচার ও প্রদর্শন।
  • বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার, বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং এফএম রেডিও-র মাধ্যমে জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে গণযোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনা।
  • লোক গান, জারীগান, যাত্রা, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা এসবের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এসকল বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা।
  • স্থানীয় কলাকুশলীদের মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় সাতটি বিভাগীয় শহরে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গ সমতা বিষয়ে মিউজিক্যাল শোর আয়োজন।

দেশব্যাপি বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস, সেবা ও প্রচার সপ্তাহ, বিভিন্ন বিভাগে গণউদ্বুদ্ধকরণ সভা উদযাপন সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে জনগোষ্ঠির মাঝে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও জেন্ডার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপক কার্যক্রমসমূহ মানুষকে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ভয়াবহতা তুলে ধরে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে যথেষ্ট সহায়কের ভুমিকা পালন করেছে।

পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমে সাফল্য :
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক উপরোক্ত কার্যক্রমসমূহ গ্রহণ করায় তা শিশুমৃত্যু হার হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে ৫ বছরের নীচে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৫৩। ২০১৫ সালের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ নির্ধারিত সময়ের আগেই টপকে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়। শিশুমৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৪৩। ২০১৫ সালের মধ্যে এর লক্ষ্যমাত্রা ৩১ নির্ধারণ করা আছে। যা অতিসহজেই অতিক্রম করা সম্ভব হবে।

 
   
 

মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে অর্জনও চোখে পড়ার মতো। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে বর্তমানে ১৯৪ জন মা মারা যায়। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ১৪৩ এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা আছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গৃহিত বাস্তবধর্মী কার্যক্রমের ফলে ২০১৫ সালের মধ্যেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়। বিগত এক দশক মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ৪০% হ্রাস পেয়েছে যা এক যুগান্তকারী সাফল্য হিসাবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছে।

পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন
আরা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০১৫ সালের মধ্যে প্রজননকালীন স্বাস্থ্য সেবার সর্বজনীন প্রবেশাধিকার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ ট্র্যাকে অবস্থান করছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ২০১৫ এর মধ্যে ৭২ শতাংশ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়াও সম্ভব হবে বলে অনুমেয়। কারণ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে এ হার ৬২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। প্রসবপূর্ববর্তী সেবা গ্রহণকারীর ( অন্ততঃ ১ বার) হার ২০১৫ এর মধ্যে ১০০ এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই ৭০ অতিক্রম করেছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে অপূর্ণ চাহিদার হার ২০১৫ এর মধ্যে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে অপূর্ণ চাহিদার হার ১৪ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। এভাবে প্রতিটি সূচকেই দৃশ্যমান উন্নতি সম্ভব হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা মোতাবেক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে।

আন্তর্জাতিক সাফল্য :
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ৪ ও ৫ এ যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন বিশ্ববাসীর নজর আকৃষ্ট করেছে। শিশুমৃত্যু হ্রাসে ঐতিহাসিক সাফল্য লাভ করে দেশের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ নিউইর্য়কে এ পুরষ্কার গ্রহণ করেন। মা ও শিশুমৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশের যুগান্তকারী অর্জনের জন্য ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সাউথ সাউথ পুরষ্কারে ভূষিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কারও গ্রহণ করেন।

 
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন   পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন
 
 
Line